✍️ শফিক ইসলাম (রাজনৈতিক বিশ্লেষক)
ব্রিটিশ আইন সংস্থা ডাউটি স্ট্রিট চেম্বার্স আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (ICC) বিধিমালার ধারা
১৫ অনুযায়ী একটি কমিউনিকেশন প্রস্তুত করছে। ধারা ১৫–এর আওতায় আইসিসির এখতিয়ারভুক্ত
alleged (আভিযোগিত) অপরাধের শিকাররা এসব অপরাধ প্রসিকিউটরের নজরে আনতে এবং তদন্তের
আবেদন করতে পারেন।
২০২৪ সালের ৮ আগস্ট ড. ইউনূস বাংলাদেশের ক্ষমতা নেওয়ার পর থেকে সাংবাদিক, পুলিশ সদস্য,
সরকারি কর্মচারী, প্রগতিশীল কর্মসূচির সমর্থক ও কর্মী, সংখ্যালঘু এবং সাবেক সরকারদল আওয়ামী
লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বিনা প্ররোচনায় সহিংস হামলা ঘটেছে—এমন অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগগুলোর মধ্যে রয়েছে—
হত্যা,
মিথ্যা ফৌজদারি মামলায় নির্বিচার কারাবন্দি করা (বিশেষত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে),
পরিকল্পিত লুটপাট,
অপ্রতিরোধ্য মব হিংসা,
রাষ্ট্রপৃষ্ঠপোষক নির্যাতন ও ভাঙচুর, এবং
ধর্মীয় বিদ্বেষ উসকানি—যেমন হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর আক্রমণ ও মন্দির ধ্বংস।
বাংলাদেশে এসব অপরাধের দায়ীদের বিচারের কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
ধারা ১৫–এর কমিউনিকেশনটি দেশে সংঘটিত বর্বরতার ভুক্তভোগী ও সাক্ষীদের সাক্ষ্য-প্রমাণের ওপর
ভিত্তি করে হবে। হামলা ও নির্যাতনের ব্যাপকতা ও পদ্ধতিগত প্রকৃতি ইঙ্গিত করে যে এগুলো সর্বোচ্চ
পর্যায়ে পরিকল্পিত—এবং আইসিসি বিধিমালার ধারা ৭ অনুযায়ী মানবতাবিরোধী অপরাধ—যেমন হত্যা,
নিপীড়ন, অবৈধ আটক/স্বাধীনতা থেকে গুরুতর বঞ্চনা—হিসেবে গণ্য হতে পারে।
স্টিভেন পাওলস KC বলেন, “কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। আইসিসির এখতিয়ারের মধ্যে পড়া অপরাধের
শিকাররা নিজ দেশে বিচার না পেলে, এসব অপরাধ আইসিসির নজরে আনা জরুরি—যাতে নিরপেক্ষ ও দৃঢ়
তদন্ত হয়।”
এদিকে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এবং ‘ছাত্র আন্দোলন’-এর এক সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ
সজীব ভুুইয়া সম্প্রতি স্বীকার করেছেন যে নির্বাচিত সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিপ্লবের পরিকল্পনা
ছিল—অর্থাৎ তাদের অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। প্রশ্ন উঠছে—কেউ বা কারা সেই অস্ত্র-
প্রশিক্ষণ দিয়েছে, এখন সেগুলো কোথায় ও কার নিয়ন্ত্রণে আছে?
এ থেকে স্পষ্ট ইঙ্গিত মেলে যে ৪৭৩টি থানা আক্রমণ ও লুটপাট, পুলিশ সদস্য হত্যা, শতাধিক
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারি যানবাহন ধ্বংস, গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় স্থাপনায় হামলা—সবকিছুই ২০২৪
সালের জুলাই-আগস্টে তথাকথিত ‘ছাত্রদের’ আন্দোলনের ছত্রছায়ায় পূর্বপরিকল্পিত ছিল।
সাবেক সরকার ৫ আগস্ট ২০২৪ পতনের পর আওয়ামী লীগের বহু নেতা-সমর্থককে হত্যা, তাঁদের বাড়িঘর-
ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ধ্বংস—সবই নাকি বর্তমান প্রশাসনের বৃহত্তর পরিকল্পনার অংশ, যাতে আওয়ামী
লীগকে নিশ্চিহ্ন করা যায়। কারাগারগুলোতে জায়গা খালি করতে দণ্ডিত অপরাধীদের মুক্তি ও আওয়ামী
লীগারদের গণগ্রেপ্তার—এমন অভিযোগও আছে। এমনকি বিশ্বখ্যাত ক্রিকেটার ও তৎকালীন সংসদ
সদস্য সাকিব আল হাসান–কেও হত্যা মামলায় আসামি করা হয়, যিনি অভিযোগকৃত সময়ে বিদেশে খেলায়
ব্যস্ত ছিলেন।
শাহীন আলমের ছোট ভাই শামীম মোল্লা ক্ষমতা নেওয়ার পর ড. ইউনূসের সমর্থকদের হাতে অপহৃত ও খুন
হন। শাহীন আলম বলেন, “আমার ভাইকে বর্বরভাবে হত্যা করা হয়েছে। বাংলাদেশ আইনশৃঙ্খলাহীনতার
গভীর খাদে নেমে গেছে। পরিচিত সন্ত্রাসীরা কারাগার থেকে বেরিয়ে এসেছে, উগ্র গোষ্ঠীর সদস্যরা
ক্ষমতার আসনে বসেছে। আমি ন্যায়বিচার চাই—অপরাধীদের জবাবদিহি হোক।”
২০২৫ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি—পূর্বতন সরকারের পতনের ৬ মাস পর—ঢাকার ধানমন্ডি ৩২ নম্বর
(স্বাধীনতার স্মৃতিবিজড়িত ঐতিহাসিক স্থাপনা) এবং দেশজুড়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের বহু বাড়ি
বুলডোজার-এক্সকাভেটর দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়; সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আগেভাগেই প্রচার করে ড.
ইউনূস প্রশাসনের ছাত্রশাখা এই অভিযান চালায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নীরবতা ও পরে কয়েকজন
উপদেষ্টার পোস্ট—সবই সরকারের অলিখিত মদদকে প্রকাশ করে—যে কোনো “হুমকি”কে মব বাহিনী
দিয়ে নির্মমভাবে দমন করা হবে।
ড. ইউনূস নিজ দেশে দণ্ডিত ব্যক্তি; তাঁর বিরুদ্ধে আর্থিক জালিয়াতি ও দুর্নীতির বহু অভিযোগ ছিল ও
আদালতে চলমান মামলাও ছিল। ক্ষমতা দখলের পর তিনি জনতার চাপ ব্যবহার করে প্রধান বিচারপতি ও
কিছু বিচারপতি বদল করান, তথাকথিত পাপেট বিচারক দিয়ে নিজের দণ্ড ও অভিযোগ উল্টে দেন, কর
ফাঁকি, স্বজনপ্রীতি, তহবিল স্থানান্তর ও সম্পদ সঞ্চয়ে রাষ্ট্রশক্তি ব্যবহার করেন। গণমাধ্যমকেও
মব ও অনুগত কর্মকর্তাদের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়—তাঁর কোনো অনিয়ম আর প্রকাশ্যে আসে না।
ড. ইউনূসের লক্ষ্য শুধু আওয়ামী লীগ ও তাদের সমর্থকদের উচ্ছেদ নয়—১৯৭১-এর স্বাধীনতার
ইতিহাসও উল্টে দেওয়া। “জয় বাংলা” স্লোগান দিলে হামলা-মামলায় জড়ানো হচ্ছে; বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর
রহমানের নাম-স্মৃতি মুছে ফেলার চেষ্টা চলছে। পূর্বে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী জামায়াতে ইসলামীপন্থী বক্তা
মিজানুর রহমান আজহারি পর্যন্ত বলেছেন—“রাজাকার আর গালি নয়, পুরস্কার”—যা মুক্তিযুদ্ধবিরোধী
শক্তির পাল্টা ইতিহাস চাপিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টার পরিচয়।
সব মিলিয়ে, ড. ইউনূস ও তাঁর সুবিধাভোগীদের বিরুদ্ধে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের সফল রেফারাল হলে
আইসিসি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করতে পারে। (বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন)
�� দ্রষ্টব্য: আইসিসিতে কমিউনিকেশন দাখিল—তদন্ত শুরু ও পরোয়ানা জারির চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত একমাত্র
আইসিসি প্রসিকিউটর ও প্রি-ট্রায়াল চেম্বারের এখতিয়ারভুক্ত।