✍️ ইঞ্জিনিয়ার শফিক ইসলাম (রাজনৈতিক বিশ্লেষক)
ড. মুহাম্মদ ইউনূস ২০০৬ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার পান আধুনিক ক্ষুদ্রঋণ ও ক্ষুদ্র অর্থায়নের
ধারণার পথিকৃৎ হওয়ার জন্য। তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা। “প্রদীপের নিচেই সবচেয়ে
অন্ধকার”—এই প্রবাদবাক্যের আলোকেই গ্রামীণ ব্যাংক সৃষ্টির কিছু অল্প-পরিচিত তথ্য ও সংশ্লিষ্ট
বিষয়ে আলোকপাত করে পাঠকদের সামনে ড. ইউনূস সম্পর্কে ভারসাম্যপূর্ণ ধারণা উপস্থাপনই এই
লেখার লক্ষ্য।
গ্রামীণ ব্যাংকের উদ্ভব: রাষ্ট্রের বিশেষ সুরক্ষা ও সুবিধা
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বিশেষ কর্মসূচির আওতায় গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে সহজ-শর্তে ঋণ
দেওয়ার উদ্দেশ্যে ১৯৭৬ সালে ড. ইউনূস একটি পাইলট প্রকল্প শুরু করেন, যা ১৯৭৯ সালে টাঙ্গাইলে
সম্প্রসারিত হয়। সফলতার পর তাঁর প্রস্তাব অনুযায়ী জামানতবিহীন ঋণ বিতরণ ও আদায় নিশ্চিত করতে
বাংলাদেশ সরকার প্রকল্পটিকে ব্যাংকে রূপান্তরের উদ্যোগ নেয়। ১৯৮৩ সালে গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশ,
১৯৮৩—এর অধীনে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠাকালে ব্যাংকের ৩ কোটি টাকার মূলধনের
মধ্যে সরকার ৬০% (১ কোটি ৮০ লক্ষ টাকা) প্রদান করে। অধ্যাদেশের ৪(৩) ধারা অনুযায়ী গ্রামীণ
ব্যাংককে ব্যাংক কোম্পানি আইনসহ সংশ্লিষ্ট বিধি থেকে অব্যাহতি এবং ৩৩ ধারা অনুযায়ী আয়কর
অব্যাহতি দেওয়া হয়।
ব্যাংকের ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম সফল করতে সরকার শুরু থেকেই ব্যবস্থাপনায় হস্তক্ষেপ করেনি; ড.
ইউনূসই প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এই সুযোগে
তিনি ব্যাংক পরিচালনায় প্রচলিত আইন-কানুনকে তোয়াক্কা না করে ব্যক্তিচ্ছন্নভাবে নানা সিদ্ধান্ত
নেন—এমন অভিযোগ রয়েছে। অধ্যাদেশের ১৪(৪) ধারা অনুযায়ী এমডি ব্যাংকের পূর্ণসময়ের কর্মকর্তা
হওয়ার কথা; কিন্তু তিনি কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই দীর্ঘ সময় দেশের বাইরে অবস্থান করেন। বোর্ড বা
চেয়ারম্যান তাঁর স্বেচ্ছাচারিতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেননি; এমনকি আজীবন এমডি থাকার চেষ্টাও হয়, যা
অধ্যাদেশবিরোধী।
৬০ বছর বয়স-পরবর্তী বেআইনি পদধারণ
অধ্যাদেশের ১৪(১) ধারায় বলা আছে—বোর্ড বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিয়ে এমডি নিয়োগ করবে;
১৪(৪) ধারায় সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৬০ বছর। কিন্তু ১৯৯৯ সালে বোর্ড বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানুমোদন
ছাড়াই ও বয়সসীমা ভেঙে ৬০ বছর পূর্ণ করা ড. ইউনূসকে অনির্দিষ্ট মেয়াদে এমডি রাখে। ১৯৯৯ সালের
পরিদর্শনে বাংলাদেশ ব্যাংক এ নিয়োগকে বেআইনি বলে মন্তব্য করে। পরবর্তীতে অনুমোদন না থাকার
কারণে ১৪(১) ধারার লঙ্ঘনে তাঁকে এমডির পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। ড. ইউনূস হাইকোর্টে রিট
করেন; তবে ২০১১ সালের এপ্রিলের রায়ের পর তাঁকে পদত্যাগ করতে হয়।
সুপ্রিম কোর্ট রায় দেয় যে জুন ২০০০ থেকে এপ্রিল ২০১১—এই ১০ বছর ৬০ বছরোত্তীর্ণ হয়ে এমডি
পদে থাকা বেআইনি ছিল। এই সময়ে তিনি বেতন-ভাতা-সুবিধা মিলিয়ে ৫২,৯৩,৭০৪ টাকা নেন; বিভিন্ন
কর্তন শেষে নেট ৩৮,৮৮,১৮০ টাকা (যার মধ্যে ২,০০,১৬৩ টাকা আয়কর)। অফিসে একটি, বাসায় দুটি
টেলিফোন, একটি ইন্টারনেট, একটি পিবিএক্স ও চারটি পত্রিকার খরচ ব্যাংক বহন করে।
বিদেশি সম্মানী/পুরস্কার/রয়্যালটি গ্রহণ: পূর্বানুমোদনহীনতা
২০০৪–২০১১ অর্থবছরে ৭ বছরে তিনি ৪৯,৮৮,১২,২০৫২ টাকা করমুক্ত আয়ের ঘোষণা দেন—১৩৩টি
বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সম্মানী, ১০টি পুরস্কার ও ১৩টি রয়্যালটি—যার বিপরীতে ১,২৪৭,০৩০,০১১ টাকা
করছাড় সুবিধা নেন। কিন্তু ব্যাংক বোর্ডের পূর্বানুমোদন ছাড়াই এসব গ্রহণ করেন। অধ্যাদেশ ও ২০১১
সালের ৫ মে আপিল বিভাগে প্রদত্ত রায় অনুযায়ী গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি “সরকারি কর্মচারী” হিসেবে
গণ্য; অতএব দেশি-বিদেশি কোনো সম্মানী/রয়্যালটি/পুরস্কার গ্রহণে বোর্ড/সরকারের পূর্বানুমোদন
প্রয়োজন ছিল—যা তিনি নেননি। ফলে তাঁর বিদেশ সফর ও সম্মানী আদায়ের বৈধতা প্রশ্নবিদ্ধ।
গ্রামীণ ব্যাংক ভবনে ‘ইউনূস সেন্টার’: নামমাত্র ভাড়ায় বিশাল
জায়গা
অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ গঠিত ৫ সদস্যের পর্যালোচনা কমিটির
(সভাপতি অধ্যাপক একে এম মনোয়ার উদ্দিন আহমেদ; ১০ জানুয়ারি ২০১১) প্রতিবেদনে উঠে
আসে—গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত নোবেল লরিয়েট ট্রাস্ট ব্যাংক ভবনের ১৬ তলায় ১১,০০০ বর্গফুট
জায়গা মাসিক ভাড়া ১,০০০ টাকা-এ বরাদ্দ দেয় এবং একই শর্তে তা ইউনূস সেন্টারকে দেয়। এর মাধ্যমে
ব্যাংকের আর্থিক ক্ষতি হয়।
পারিবারিক প্রতিষ্ঠানে ঋণ ও ছাড়: ৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা
এমডি থাকাকালে তিনি নিজ পরিবারের লোকসানি প্রতিষ্ঠান প্যাকেজেস কর্পোরেশন-কে ৯৫ মিলিয়ন টাকা
ঋণ দেন/ছাড় দেন/ওয়ার্ক অর্ডার জারি করেন—যা অধ্যাদেশের ১৯ ধারা লঙ্ঘন, কারণ গ্রামীণ ব্যাংকের
ঋণ ভূমিহীন দরিদ্রদের জন্য সীমিত। পরিশোধে ব্যর্থ হলে সুদের হার কমিয়ে ও মূলধনের অংশ মাফ করে
দেন। ২২ মার্চ ২০০৬-এর বোর্ডের ৭৬তম সভায় ১৯৯০–২০০৫ সময়কালে ১০/১২/১৬% সুদকে ৫%-এ
নামিয়ে আনেন—ব্যাংকের স্বার্থ না দেখে।
তহবিল স্থানান্তর: গ্রামীণ ফান্ড ও গ্রামীণ কল্যাণ
অধ্যাদেশের ক্ষমতার বাইরে গিয়ে ব্যাংকের তহবিল সরিয়ে গ্রামীণ ফান্ড ও গ্রামীণ কল্যাণ গঠন করা
হয়; পরে সেখান থেকে আরও প্রায় ৫০টি সহযোগী প্রতিষ্ঠান। ১৯৮৪ সালে দাতাদের অর্থায়নে SIDE
প্রকল্প শুরু হয়, পরে SVCF নামে পরিচিত। ১৯৯৩-এ NORAD, SIDA, CIDA, USAID, Ford
Foundation মিলিয়ে ৪৯১ মিলিয়ন টাকা আসে। বোর্ডের ৩১তম সভায় SVCF আলাদা ব্যবস্থাপনায়
গ্রামীণ ফান্ড গঠনের সিদ্ধান্ত হয়—যার মূল অর্থ ছিল দাতাদের অনুদান।
৩১ ডিসেম্বর ১৯৯৬-এ গ্রামীণ ব্যাংকের রিভলভিং ফান্ড থেকে ৩৪৭.১৮ কোটি ও সোশ্যাল
অ্যাডভান্সমেন্ট ফান্ড থেকে ৪৪.২৫ কোটি—মোট ৩৯১.৪৩৬২ কোটি টাকা গ্রামীণ কল্যাণে “হস্তান্তর”
দেখানো হয়; একই তারিখে আবার গ্রামীণ কল্যাণ থেকে ব্যাংকে “ঋণ” হিসেবে ৩৮৭.৫১৬২ কোটি টাকা
দেখানো হয়—যেন আয়করের SRO ৯৩-আইন/২০০০-এর শর্ত এড়ানো যায়। চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় মে
১৯৯৭-এ; অথচ স্থানান্তর দেখানো হয় ডিসেম্বর ১৯৯৬—পাঁচ মাস আগে। এ ধরনের কাগুজে লেনদেন
ব্যাংক ও সদস্যদের স্বার্থবিরোধী।
নরওয়ের NORAD ২৬ মে ১৯৯৮-এ অর্থ ফেরত চায়। নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির প্রফেসর জোনাথন
মরডুচ জানান, তখন গ্রামীণ ব্যাংক ১৭৫ মিলিয়ন ডলার ভর্তুকি পেয়েছিল। এর মধ্যে ১০০ মিলিয়ন
ডলারের বেশি গ্রামীণ কল্যাণে সরানোর অভিযোগে নরওয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত টিভি NRK ৩০ নভেম্বর ২০১০-এ
‘Caught in Micro Debt’s Trap’ ডকুমেন্টারি প্রচার করে। নির্মাতা টম হেইনেম্যান জানান, ছয় মাস
চেষ্টা করেও তিনি ড. ইউনূসের বক্তব্য পাননি।
১ এপ্রিল ১৯৯৮-এর এক চিঠিতে NORAD প্রধানকে ড. ইউনূস লেখেন—“আমি আপনার সাহায্য চাই…
সরকার বা বাইরের লোকজন জানলে বড় সমস্যা হবে।”—যা গোপনীয়তার চেষ্টা ও তহবিল স্থানান্তরের
বিতর্ককে আরও ঘনীভূত করে। পরবর্তীতে এনবিআর গ্রামীণ-সম্পৃক্ত ১৩ প্রতিষ্ঠানের কর হিসাব
পর্যালোচনায় অনিয়ম পায়; গ্রামীণ শক্তি, গ্রামীণ ড্যানোন ফুডস, গ্রামীণ ট্রাস্ট, গ্রামীণ কল্যাণসহ
বেশ কয়েকটি সংস্থা আয়কর সুবিধা বেআইনিভাবে গ্রহণ করেছে—এমন অভিযোগ উঠে; আয়কর
অধ্যাদেশ, ১৯৮৪-এর ১৬৫ ধারায় এসব দণ্ডনীয়।
গ্রামীণ টেলিকমের মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণে কারসাজি
বোর্ডের ৪১তম সভায় গ্রামীণ টেলিকম গঠন ও SAF তহবিল থেকে ৩০ কোটি টাকা ১১% সরল সুদে
দীর্ঘমেয়াদি ঋণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়; শর্ত—লাভের কমপক্ষে ৫০% SAF-এ যাবে। ৪৬তম সভায়
অন্যান্য ব্যাংক থেকে ৩০ কোটি টাকার ঋণে গ্রামীণ ব্যাংক গ্যারান্টর হয়; ৫০তম সভায় SEDF থেকে
১০.৬০ মিলিয়ন ডলার ঋণে “কিপ-ওয়েল কমিটমেন্ট” এবং গ্রামীণফোনের ৫০ মিলিয়ন ডলার ঋণে
(IFC/CDC/ADB) সাইড লেটার দেয়।
গ্রামীণ টেলিকমের কাছে গ্রামীণফোনের ৩৪.২% শেয়ার; আনুমানিক মূল্য ১৩২.৩৫ বিলিয়ন টাকা।
২০০৩–২০২২ সময়ে প্রাপ্ত লভ্যাংশ আনুমানিক ১০৮.৯০১৯ বিলিয়ন টাকা। বর্তমানে শেয়ার ব্যতীত মোট
সম্পদ প্রায় ৬২ বিলিয়ন টাকা—যার ২৭.২১ বিলিয়ন এফডিআর, ৩০.১৩ বিলিয়ন গ্রামীণ টেলিকম ট্রাস্টে
ঋণ/অনুদান। অথচ গ্রামীণ ব্যাংকের আর্থিক অবদান সত্ত্বেও ইকুইটি মালিকানা নিশ্চিত করা হয়নি—ড.
ইউনূস নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে তা হতে দেননি।
৩০ মে ২০২৩—দুদকের উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিককল্যাণ তহবিল
থেকে ২৫২.২০৬৭৮ মিলিয়ন টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ড. ইউনূসসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। ১
ফেব্রুয়ারি ২০২৪ চার্জশিট, ২ এপ্রিল ২০২৪ চার্জশিট গৃহীত। অভিযোগপত্র অনুযায়ী ৯ মে ২০২২-এর
১০৮তম বোর্ড সভার সিদ্ধান্তে ঢাকাব্যাংক গুলশান শাখায় হিসাব খোলা দেখানো হয়; কিন্তু নথিতে ৮ মে
হিসাব খোলার তারিখ; একই তারিখ “সেটেলমেন্ট এগ্রিমেন্ট”-এও—যা বাস্তবে অসম্ভব। পরে ১০ মে
২০২২ ইউসিবি মিরপুর থেকে ৪৩৭.০১১২৬২১ মিলিয়ন টাকা ঢাকাব্যাংকে স্থানান্তর দেখানো হয়। ১০৯তম
সভায় অ্যাডভোকেট ফি হিসেবে ১৬.৩৯১৩৮৯ মিলিয়ন অনুমোদন হয়। কিন্তু শ্রমিক-কর্মচারীদের পাওনা
বিতরণের আগেই কৌশলে বিভিন্ন ব্যক্তিগত হিসাবে ৩০+৩০+৩০ মিলিয়ন ইত্যাদি বহুমাত্রিক লেনদেন
হয়; দুদক বলছে, প্রকৃত অ্যাডভোকেট ফি ১০ মিলিয়ন; বাকি ২৫২.২০৬৭৮ মিলিয়ন আত্মসাৎ। শ্রম
আইন পরিদপ্তরের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ২৮ জুলাই ২০২২ তদন্ত শুরু হয়—যেখানে আরও
৪৫৫.২১৩৬৪৩ মিলিয়ন টাকা শ্রমিককল্যাণ তহবিল থেকে বণ্টন না করে আত্মসাতের অভিযোগ, ও
২,৯৭৭ মিলিয়ন টাকা মানিলন্ডারিংয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে স্থানান্তরের অভিযোগ রয়েছে।
“প্রতিহিংসা” অভিযোগ—বাস্তবতার মুখে
ড. ইউনূস দাবি করেন, আওয়ামী লীগ সরকার ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর প্রতি
প্রতিহিংসাপরায়ণ ছিলেন। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন উদাহরণ দেখায়। যেমন—চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ
(সিডিএ) ৮৩.১৫ কাঠা (৫৯,৮৭০.৩৯ বর্গফুট) জমি ৭৪,৮৩,৫০০ টাকা নামমাত্র দামে “গ্রামীণ কল্যাণ
ফাউন্ডেশন”-এর নামে ‘অনন্যা স্কুল ও কলেজ’ স্থাপনে ইজারা দেয় (চুক্তি: ১৫ ডিসেম্বর ২০১৫)। চুক্তির
ধারা অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে আন্তর্জাতিক মানের ভবন নির্মাণ না করলে ইজারা বাতিলযোগ্য ছিল;
তবুও শর্ত পূরণ না হওয়া সত্ত্বেও ইজারা বাতিল করা হয়নি—প্রতিহিংসা থাকলে তা-ই হতো।
আরও অভিযোগ—পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন স্থগিতের নেপথ্যে তাঁর ভূমিকা। উইকিলিকস
(২০১৬)–এ হিলারি ক্লিনটনের ফাঁস হওয়া ৩০,০০০ ইমেলের মধ্যে ড. ইউনূসের ইমেলও ছিল, যেখানে তিনি
গ্রামীণ ব্যাংকের বিরুদ্ধে তদন্ত ও তাঁকে অপসারণের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন এবং হস্তক্ষেপ চান; সরকার
তদন্ত না থামালে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বাতিল করাতে সহায়তা চান—এমন অভিযোগ AP, Fox News,
The Daily Caller, Denver Post-এও আসে। যদিও পরবর্তীতে সরকার নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু
নির্মাণ করে। তাহলে প্রতিহিংসার অভিযোগ কীভাবে টেকে—প্রশ্ন উঠেই থাকে।
ক্ষমতায় এসে সব বদলে দেওয়া
অবাক করা বিষয়—গত ৮ মাস ধরে ড. ইউনূস বাংলাদেশের একটি অন্তর্বর্তী সরকার নেতৃত্ব দিচ্ছেন; এই
সময়ে তিনি নিজের বিরুদ্ধে আদালতের রায় উল্টে দিয়েছেন, অসমাপ্ত তদন্ত স্থগিত করেছেন—ফলে “কার
কার প্রতি প্রতিশোধ আছে” তা স্পষ্ট। ক্ষমতায় এসে তিনি পূর্বতন সরকারের সঙ্গে যুক্ত রাজনীতিবিদ,
সমর্থক, আমলাদের ‘দানবায়ন’ করেছেন, যাতে রাষ্ট্রযন্ত্রকে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা যায়, এমনকি
ছাত্রশাখার ‘মব জাস্টিস’ দিয়ে নির্যাতন-হত্যাও ন্যায্যতা পায়। “গুরুর ইচ্ছাই আইন”—প্রমাণ পেতে
বাংলাদেশে ড. ইউনূসের বর্তমান প্রশাসনের দিকে তাকালেই যথেষ্ট।