— বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বিবৃতি
ড. ইউনূস এবং কিছু বিদেশি মহলের ঘোষণাটি সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক, অসাংবিধানিক, রাষ্ট্রবিরোধী এবং
জঙ্গি-সহায়ক। এটি বাংলাদেশের সংবিধান ও রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বকে সুস্পষ্টভাবে লঙ্ঘন করেছে।
ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ঘোষণা করছে যে, তাদের সকল কার্যক্রম চলবে
সংবিধান, সার্বভৌমত্ব ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের আলোকে। এ ধরনের ঘোষণা কেবল অসাংবিধানিক ও
আইনবহির্ভূতই নয়, এটি জনগণের রায় ও সার্বভৌমত্বেরও পরিপন্থী। এটি বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও
মর্যাদার ওপর সরাসরি আঘাত। আমাদের রাজনৈতিক দর্শনে এমন ষড়যন্ত্রকে সমর্থন বা সহনশীলতার
কোনো স্থান নেই।
বাংলাদেশের জাতীয় চেতনার বিকাশ ও একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠায়
আওয়ামী লীগের অবদান অনস্বীকার্য। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলার
মানুষ নিরঙ্কুশভাবে তাঁকে সমর্থন করেছিল।
ভাষা আন্দোলন, স্বশাসনের সংগ্রাম এবং মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ স্বাধীনতার পথ প্রশস্ত
করেছে। পৃথিবীর ইতিহাসে কোনো রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের মতো এভাবে একটি জাতির জন্মে অনন্য
অবদান রাখেনি।
স্বাধীনতার পর থেকে দেশের সব উল্লেখযোগ্য অর্জন এসেছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে। মুক্তিযুদ্ধোত্তর
বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার ষড়যন্ত্র যখন চলছিল, তখন বঙ্গবন্ধু উন্নত, সমৃদ্ধ ও
অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনের নানা পদক্ষেপ নেন। মাত্র সাড়ে তিন বছরে তিনি একটি আধুনিক
কল্যাণরাষ্ট্রের ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন, অগণিত চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও।
বঙ্গবন্ধু তিন মাসের মধ্যে ২৫ লক্ষাধিক শরণার্থীকে দেশে ফিরিয়ে আনেন, যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতিকে
পুনর্গঠন করেন এবং সশস্ত্র বাহিনীর চেইন অব কমান্ড পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন। যুদ্ধোত্তর ইতিহাসে এটি
ছিল এক নজিরবিহীন সাফল্য। তিনি পুনর্গঠন ও অগ্রগতির একটি পূর্ণাঙ্গ কাঠামো উপস্থাপন
করেছিলেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর বাংলাদেশ তার
অগ্রগতির লক্ষ্য হারায়। টানা ছয় বছর বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরতে দেওয়া হয়নি।
অবশেষে ১৯৮১ সালের ১৭ মে তিনি দেশে ফিরে আসেন। লাখো মানুষের ভালোবাসা ও আশায় তিনি সেদিন
স্বাগত পান। পরবর্তীতে তিনি গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেতা হন এবং পরবর্তীতে বাংলাদেশের
প্রধানমন্ত্রী হন।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এমন উন্নয়ন অর্জন করেছে, যা বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছে। তিনি
বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তাঁর অবদান বাংলাদেশের ভাবমূর্তি
বিশ্বে উঁচুতে তুলেছে এবং তাঁকে মর্যাদাবান রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
২০০৯ সাল থেকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ দ্রুত অগ্রগতি অর্জন করেছে। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের
নির্বাচনে জনগণ বিপুল সমর্থনে তাঁর দলকে বিজয়ী করেছে। বিদেশি ষড়যন্ত্র ও নানা ধ্বংসাত্মক
কর্মকাণ্ড সত্ত্বেও তিনি অগ্রগতিমুখী কর্মসূচি চালিয়ে যেতে পেরেছেন।
আজ মুক্তিযুদ্ধবিরোধীরা, যারা একসময় স্বাধীনতার বিপক্ষে ছিল, তারা আবার দেশ দখলের ষড়যন্ত্র
করছে। বাংলাদেশের জনগণকে সতর্ক থাকতে হবে। যেসব দল রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডের জন্য নিষিদ্ধ
ছিল, তাদেরকে আবারও কিছু বিদেশি শক্তি প্রাধান্য দিচ্ছে।
বিদেশি হস্তক্ষেপ আবারও দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তে অর্জিত
স্বাধীনতার পর এ ধরনের চেষ্টা জাতির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতার শামিল। বাংলাদেশের জনগণ কখনও তা
মেনে নেবে না।
ড. ইউনূস ও তাঁর বিদেশি মিত্ররা দেশকে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তির হাতে তুলে দিতে চাইছে। আওয়ামী লীগ
তা মেনে নেবে না। ইউনূস ইতোমধ্যেই দেশের অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান ও সাধারণ মানুষের কল্যাণের জন্য
নেওয়া উদ্যোগগুলোকে ধ্বংস করার চেষ্টা করেছে।
গণতন্ত্রের ছদ্মবেশে মুক্তিযুদ্ধবিরোধীরা আবারও ক্ষমতা দখলের চেষ্টা করছে। পরাজয়ের পর থেকে
তারা বারবার বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করেছে। এমনকি তারা যুদ্ধাপরাধীদের
বিচারের বিরুদ্ধেও অবস্থান নিয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে রক্ষার জন্য এ শক্তিগুলোকে প্রতিহত
করতে হবে।
বিচার বিভাগ, পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জনগণের হাতে এবং সরকারের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
আমাদের সময়ে তারা সংবিধানের আলোকে দায়িত্ব পালন করতে স্বাধীন ছিল।
বাংলাদেশের জনগণ তাদেরই সমর্থন অব্যাহত রাখবে, যারা বছরের পর বছর ত্যাগ ও সেবার মাধ্যমে
জনগণের আস্থা অর্জন করেছে। শেখ হাসিনা সেই ঐতিহ্যের সঠিক উত্তরসূরি। জাতির অগ্রগতি এই
নেতৃত্বের ধারাবাহিকতার ওপর নির্ভরশীল।
মুক্তিযুদ্ধবিরোধী ও ষড়যন্ত্রকারীদের প্রত্যাখ্যান করে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও উন্নয়নকে
শক্তিশালী করতে হবে। আওয়ামী লীগ পরবর্তী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত এবং বিশ্বাস করে জনগণ
আবারও দলকে তাদের আস্থার আসনে বসাবে।
গত নয় মাসে জাতি বুঝে গেছে কারা প্রকৃত বন্ধু, কারা দেশপ্রেমিক, আর কারা বিদেশি এজেন্ট ও
ষড়যন্ত্রকারী। চাতকপাখির মতো অপেক্ষা করছে এই নির্যাতিত, নিপীড়িত, আহত ও রক্তাক্ত
মানুষগুলো—রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা আবারও হাল ধরবেন দেশ পুনর্গঠনের লক্ষ্যে। আজ মানুষ সেই
স্বপ্ন বুকে নিয়ে বেঁচে আছে।
আমাদের বিশ্বাস, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা দেশ ও জাতিকে রক্ষার এবং বাংলাদেশের
হারানো গৌরব ও মর্যাদা ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব অবশ্যই পালন করবেন।
জয় বাংলা
জয় বঙ্গবন্ধু
বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।
�� (প্রেস বিজ্ঞপ্তি)