বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (ICT-BD), যা অসাংবিধানিক ও অবৈধ ইউনূস সরকারের
অধীনে পুনর্গঠিত হয়েছে, এখন একটি “ক্যাঙ্গারু কোর্ট”-এ রূপ নিয়েছে। পক্ষপাতদুষ্ট ও অনুগত বিচারক
এবং প্রসিকিউটরদের মাধ্যমে পরিচালিত এ আদালত কোনোভাবেই আন্তর্জাতিক মানদণ্ডসম্মত
ন্যায়বিচার দিতে সক্ষম নয়।
পক্ষপাতদুষ্ট প্রসিকিউটররা
ইউনূস সরকার জামায়াতে ইসলামী ও এবি পার্টির (জামায়াতের ভিন্নধারা) দীর্ঘমেয়াদি কর্মী অ্যাডভোকেট
তাজুল ইসলামকে প্রধান প্রসিকিউটর হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে। তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের সময় গণহত্যা
ও মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডিত জামায়াত নেতাদের প্রধান আইনজীবী ছিলেন। তাজুল ছাড়াও ICT-BD’র
অন্যান্য প্রসিকিউটরদেরও জামায়াত রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ততা কিংবা জামায়াতের যুদ্ধাপরাধীদের
পক্ষে আইনজীবী হিসেবে কাজ করার রেকর্ড রয়েছে।
এছাড়া বিএনপি-জামায়াত ঘনিষ্ঠ যুদ্ধাপরাধীদের আন্তর্জাতিক লবিস্ট টবি ক্যাডম্যানকেও
প্রসিকিউশনের উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে—যা প্রতিহিংসামূলক উদ্দেশ্যের পূর্ণতা ঘটিয়েছে।
তাজুল সম্প্রতি দণ্ডিত যুদ্ধাপরাধী এ টি এম আজহারুল ইসলামের পুনর্বিবেচনা মামলায় পক্ষ সমর্থন
করে তাঁর জামায়াতপ্রীতি পুনরায় প্রকাশ করেছেন। আরও উদ্বেগজনক বিষয় হলো, তিনি প্রকাশ্যে
বলেছেন—“কিছু রায় বের হলেই উৎখাত হওয়া আওয়ামী লীগ সরকারের নেতাদের ঔদ্ধত্য শেষ হয়ে
যাবে…”। এতে তাঁর পক্ষপাত ও প্রতিশোধমূলক উদ্দেশ্য পরিষ্কারভাবে ফুটে ওঠে।
প্রশ্নবিদ্ধ বিচারকরা
ICT-BD-তে নিয়োগ পাওয়া তিন বিচারকের কেউই আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আইনে কাজ করার অভিজ্ঞতা
রাখেন না। এর মধ্যে একজন, শফিউল আলম মাহমুদ, আগে কখনো বিচারক ছিলেন না; তিনি শুধু আইনজীবী
ছিলেন। তিনি বিএনপির আইনজীবী রাজনীতির সক্রিয় সদস্য এবং বিএনপি সমর্থিত “বাংলাদেশ
ন্যাশনালিস্ট ল’ইয়ার্স ফোরাম”-এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
পূর্বনির্ধারিত রায়
প্রধান প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বিভিন্ন সময়ে মন্তব্য করেছেন যা স্পষ্ট করে যে ICT-BD-তে চলমান
প্রক্রিয়ার ফলাফল আগেই ঠিক করা আছে। তিনি বলেছেন—“ডিসেম্বরের আগেই পূর্বতন প্রশাসনের
গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজনের মামলার নিষ্পত্তি হয়ে যাবে।” অথচ তখন বিচারকাজ শুরুই হয়নি। এমন পূর্বাভাস
রায় আগেই নির্ধারিত থাকার প্রমাণ।
রাজনৈতিক ও নির্বাহী হস্তক্ষেপ
ইউনূস সরকারপন্থী “কিংস পার্টি” (ন্যাশনাল সিটিজেন্স’ পার্টি) এবং “মব-ব্রিগেড” (স্টুডেন্টস
এগেইনস্ট ডিসক্রিমিনেশন)-এর নেতারা প্রকাশ্যে বলেছেন নির্বাচনের আগে ফাঁসির সাজা নিশ্চিত করতে
হবে। এসব বক্তব্য ICT-BD-তে চলমান প্রক্রিয়ায় সরাসরি রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের প্রমাণ।
ভয়ের পরিবেশ
ICT-BD বাংলাদেশের বিচার প্রশাসনের অংশ, তাই এটি দেশের সামগ্রিক আতঙ্ক-সৃষ্টিকারী পরিস্থিতি
থেকে মুক্ত নয়। ইউনূস সরকারের আমলে ভয়াবহ চাপে প্রধান বিচারপতি ও আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ
বিচারপতিরা পদত্যাগ করেছেন। ১২ জন হাইকোর্ট বিচারপতি বিচারকাজ থেকে বিরত থেকেছেন প্রাণনাশের
হুমকিতে। আইনি উপদেষ্টা ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বিচারকদের জামিন না দিতে প্রকাশ্যে নির্দেশ দেন।
যারা এর বিরোধিতা করেন, তাঁদের বদলি করে দেওয়া হয়।
আসামিপক্ষের আইনজীবীদের আদালত প্রাঙ্গণেই হামলা করা হয়, পুলিশ নীরব থাকে। এমনকি আওয়ামী
লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের পক্ষে মামলা লড়ার অপরাধে কিছু আইনজীবীকে গ্রেপ্তারও করা
হয়েছে।
ন্যায়বিচারের সম্ভাবনা কোথায়?
প্রশ্নবিদ্ধ যোগ্যতার বিচারক, প্রতিহিংসাপরায়ণ প্রসিকিউটর, আদালতে আইনজীবীদের ওপর হামলা,
সরকারের নির্দেশ মানতে বাধ্য বিচারক, রাজনৈতিক দলের প্রকাশ্য চাপ—সব মিলিয়ে ICT-BD এখন এক
প্রহসন আদালতে পরিণত হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে ন্যায়বিচারের কোনো সুযোগই নেই।
✍️ সূত্র: X.com
✍️ লেখক: মোহাম্মদ এ. আরাফাত – রাজনীতিবিদ, একাডেমিক, সামাজিক কর্মী, শান্তি-প্রতিশ্রুত ও
সহিংস উগ্রবাদবিরোধী। সাবেক সংসদ সদস্য ও তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী।
�� প্রকাশিত: ইঞ্জিনিয়ার শফিক ইসলাম (রাজনৈতিক বিশ্লেষক)