— বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বিবৃতি
প্রেস বিজ্ঞপ্তি |
অসাংবিধানিক ও অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী এবং জঙ্গিগোষ্ঠীর পৃষ্ঠপোষক ড. ইউনূসের নেতৃত্বে
তথাকথিত অস্থায়ী সরকার বাংলাদেশের জন্মদাতা রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সকল
কার্যক্রম সম্পূর্ণরূপে অসাংবিধানিক, বেআইনি ও অন্যায়ভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। এটি শুধু
অসাংবিধানিক, বেআইনি বা অন্যায় নয়—এটি জনগণের অভিপ্রায়ের বিরুদ্ধে গৃহীত এক সিদ্ধান্ত, যা
গোটা জাতিকে বিস্মিত করেছে। দেশপ্রেমিক প্রতিটি মানুষ এই বর্বর কর্মকাণ্ডে স্তম্ভিত হয়েছে।
এরকম এক অসভ্য সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে নিন্দা ও ঘৃণা প্রকাশ করার ভাষা আমাদের নেই।
বাংলার জাতি গঠনে এবং বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় আওয়ামী লীগের অবদান অনস্বীকার্য। বলা যায়,
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের হাত ধরেই বাংলাদেশের জন্ম
হয়েছে। ভাষা আন্দোলন, স্বশাসনের সংগ্রাম, মুক্তি সংগ্রাম এবং সর্বোপরি স্বাধীনতা যুদ্ধ—প্রতিটি
ক্ষেত্রেই আওয়ামী লীগের অবিসংবাদিত নেতৃত্ব রয়েছে। পৃথিবীর ইতিহাসে কোনো একক রাজনৈতিক দলের
রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় এ ধরনের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা বিরল।
স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে দেশের প্রতিটি মহৎ অর্জন আওয়ামী লীগের হাত ধরেই এসেছে। জাতির পিতা
বঙ্গবন্ধু মাত্র এক বছরেরও কম সময়ে স্বাধীন-সার্বভৌম জাতির জন্য যুগোপযোগী সংবিধান প্রণয়ন
করেছিলেন। ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তে লেখা সেই সংবিধান কল্যাণমুখী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ভিত্তি স্থাপন
করেছিল। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে মাত্র সাড়ে তিন বছরে মাথাপিছু আয়ের ভিত্তিতে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার
অন্যতম শীর্ষ অর্থনীতির দেশে পরিণত হয়। ভারতের সঙ্গে ২৫ বছরের মিত্রতা চুক্তি, ভারতীয় সেনাদের
দ্রুত প্রত্যাহার, স্থলসীমান্ত চুক্তি—সবই আওয়ামী লীগের দূরদর্শী নেতৃত্বে সম্ভব হয়। বঙ্গবন্ধু
কন্যা শেখ হাসিনার উদ্যোগ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আন্তরিকতায় এ স্থলসীমান্ত
চুক্তি পূর্ণ বাস্তবায়ন হয়েছিল।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পর দীর্ঘদিন দেশকে পাকিস্তানি ভাবধারায়
ফিরিয়ে নেওয়ার ষড়যন্ত্র চলেছে। নির্বাসন শেষে শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরে আসেন
মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। সংগ্রামী নেত্রী থেকে তিনি রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে
আত্মপ্রকাশ করেন। তাঁর নেতৃত্বেই বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে মর্যাদার আসনে বসেছে। উন্নয়নের রোল
মডেল হয়েছে। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। অথচ আজ ষড়যন্ত্রকারীরা
বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারকে কল্পিত দুর্নীতির গল্পে অসম্মান করার অপচেষ্টা
চালাচ্ছে। যারা জাতির জন্য গৌরব বয়ে এনেছেন, তাঁদের অসম্মানিত করা হচ্ছে—যা সমগ্র জাতির জন্য
লজ্জার।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে নস্যাৎ করার ষড়যন্ত্রে বিদেশি এজেন্ট
ইউনূসকে বেআইনিভাবে রাষ্ট্রক্ষমতায় বসানো হয়। তারপর থেকেই তিনি দেশ ধ্বংসের কাজে লিপ্ত। ৫
আগস্টের পর থেকে সর্বত্র গণহত্যা চালানো হয়েছে। পুলিশ, আওয়ামী লীগ কর্মী-সমর্থক, মুক্তিযুদ্ধের

পক্ষের রাজনৈতিক দল ও নেতৃবৃন্দ, এবং বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর ভয়াবহ নির্যাতন ও
হত্যাযজ্ঞ হয়েছে। অবৈধ দখলদার ইউনূস আজ বাংলাদেশকে দুঃশাসনের ঘেরাটোপে আবদ্ধ করেছে।
দেশের অর্থনীতি ধ্বংসপ্রাপ্ত, দেশ দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে। পুলিশ ও সিভিল প্রশাসনের মেরুদণ্ড ভেঙে
দেওয়া হয়েছে। সাংবাদিক, আইনজীবী, সাংস্কৃতিক কর্মীসহ সব শ্রেণির মানুষের ওপর নির্যাতন চালানো
হচ্ছে। শিক্ষক সমাজকে অপমানিত করা হয়েছে, অসংখ্য শিক্ষককে অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।
নারীর প্রতি সহিংসতা ইতিহাসের সব রেকর্ড ভেঙেছে।
সংবিধান সংস্কারের নামে বিদেশি শক্তির মাধ্যমে শহীদদের রক্তে লেখা সংবিধান বাতিল করে দেশের
স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বন্ধক রাখার ষড়যন্ত্র চলছে। মুক্তিযুদ্ধের নাম-নিশানা মুছে ফেলার চেষ্টা
হচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর নাম নিষিদ্ধ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এই বিদেশি ষড়যন্ত্রের বিষয়ে বারবার সতর্ক করেছিলেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। ইউনূস আজ
বিদেশি এজেন্ট হিসেবে দেশ বিক্রি করতে উঠেপড়ে লেগেছে। চট্টগ্রাম বন্দর, বিমানঘাঁটি সহ গুরুত্বপূর্ণ
স্থাপনাগুলো বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার ষড়যন্ত্র চলছে।
ধর্মীয় উগ্রবাদী ও জঙ্গিদের প্রশ্রয় দিয়ে তিনি শুধু বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা নয়, ভারতের
নিরাপত্তা ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতাও বিপন্ন করছেন। মুক্তিযুদ্ধের বন্ধু ভারতকে বৈরিতার সঙ্গে
মোকাবিলা করা হচ্ছে, অথচ ১৯৭১ সালের ঘাতক পাকিস্তানকে ঘনিষ্ঠ বন্ধু বানানো হয়েছে—যা বাঙালি
জাতির জন্য লজ্জাজনক।
শেখ হাসিনার সময় মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে
হয়েছে। বিশ্ব সেই বিচারকে স্বাগত জানিয়েছিল। প্রতিশোধ হিসেবে আজ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের নেতাদের
প্রহসনমূলক বিচারের মুখোমুখি করা হচ্ছে।
আইনের শাসনের পরিবর্তে দেশে “মবতন্ত্র” কায়েম হয়েছে। মানুষকে কুকুরের মতো রাস্তায় হত্যা করা
হচ্ছে। নারী, শিশু, বৃদ্ধ, প্রতিবন্ধী—কেউ রেহাই পাচ্ছে না। সারা দেশে আজ সন্তানহারা মায়ের আর্তনাদ,
পিতামাতাহারা সন্তানের কান্না, ভাই হারানো বোনের শোক, স্বামী হারানো স্ত্রীর বিলাপ—বাংলাদেশের
বাতাস আজ ভারাক্রান্ত।
এই মধ্যযুগীয় দুঃশাসনকে স্থায়ী করতে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। অথচ আওয়ামী লীগ
কোনো শুকনো পাতা নয় যে, মুঠোয় ভেঙে যাবে। আওয়ামী লীগের শিকড় বাংলাদেশের মাটির গভীরে। জনগণের
রক্ত-ঘাম ও ভালোবাসায় সিক্ত এই দল।
ইতিহাস সঠিক সময়ে জবাব দেয়। মুক্তিসংগ্রামে পাকিস্তান আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করেছিল। ইতিহাস
প্রমাণ করেছে—সেই আওয়ামী লীগের হাত ধরেই বাংলাদেশ জন্ম নিয়েছিল। ২০২৫ সালে আবারও আওয়ামী
লীগ নিষিদ্ধ হয়েছে। এবারও আওয়ামী লীগ নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করবে। আওয়ামী লীগ মৃত্যুর মিছিলে দাঁড়িয়ে
জীবনের গান গায়, ধ্বংসস্তুপে দাঁড়িয়ে সৃষ্টির পতাকা তোলে। ফিনিক্স পাখির মতো আওয়ামী লীগ ছাই থেকে
পুনর্জন্ম নেয়।
আজ নয় মাসে জাতি বুঝে গেছে—কে প্রকৃত বন্ধু, কে দেশপ্রেমিক, আর কে বিদেশি এজেন্ট। বাঙালি আজ
অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে—ধ্বংসপ্রাপ্ত, ক্ষতবিক্ষত, রক্তাক্ত বাংলাদেশকে নতুনভাবে গড়ার
লক্ষ্যে রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা আবার হাল ধরবেন। সেই স্বপ্ন নিয়েই মানুষ বেঁচে আছে। আমাদের দৃঢ়
বিশ্বাস, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা দেশকে রক্ষার ও হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব
অবশ্যই পালন করবেন।
জয় বাংলা
জয় বঙ্গবন্ধু

বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।

Share.
Leave A Reply

Translate »
Exit mobile version