নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার

সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসের একটি ‘অপরিকল্পিত’ সফরকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে কক্সবাজারের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতি। হাসপাতাল পরিদর্শনের আড়ালে এই সফরের পেছনে বৃহত্তর ভূ-রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে। একই দিনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মহেশখালী-মাতারবাড়ি নিয়ে মন্তব্য এবং সফরের পরপরই বাঁকখালী তীরে উচ্ছেদ অভিযান ঘিরে তৈরি হয়েছে তীব্র উত্তেজনা ও জনমনে সার্বভৌমত্ব নিয়ে প্রশ্ন।

বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫) পিটার হাস কোনো আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই মহেশখালীতে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক জ্বালানি কোম্পানি ‘এক্সিলারেট এনার্জি’ এবং হোপ ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে নির্মিত ‘এক্সিলারেট হোপ হসপিটাল’ পরিদর্শনে যান। যদিও মহেশখালীর ইউএনও মোহাম্মদ হেদায়েত উল্লাহ এটিকে একটি সাধারণ পরিদর্শন বলে জানিয়েছেন, কিন্তু হোপ ফাউন্ডেশনের কান্ট্রি ডিরেক্টর কে এম জাহিদুজ্জামানের মতে, “এটি পূর্বপরিকল্পিত কোনো সফর ছিল না।”

এই সফরের পরেই পরিস্থিতি নাটকীয় মোড় নেয়। শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীর তীরে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান শুরু হলে শত শত নারী-পুরুষ রাস্তায় নেমে আসেন। তারা টায়ার জ্বালিয়ে, গাছের গুঁড়ি ফেলে সড়ক অবরোধ করে তীব্র বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন, যার ফলে উচ্ছেদ অভিযান স্থগিত করতে বাধ্য হয় প্রশাসন।

একই দিনে ইউনূসের মন্তব্য ও সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড়

পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে পিটার হাসের সফরের দিন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের একটি মন্তব্য। দৈনিক সমকালের এক প্রতিবেদন অনুসারে, তিনি বলেন, “মহেশখালী-মাতারবাড়িতে নতুন শহরের জন্ম হবে।” এই দুটি ঘটনাকে পাশাপাশি রেখে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় ওঠে।

আমিনুল ইসলাম নামের এক ভেরিফায়েড ফেসবুক ব্যবহারকারী তার পোস্টে লেখেন, “আজকে দেখলাম পিটার হাস মহেশখালীতে গেছে। আর আজই অধ্যাপক ইউনূস এই কথা বললেন! বাংলাদেশ কি থাকবে নাকি আস্ত দেশটাই দিয়ে দিবেন? ইউনূস দেশ বিক্রি করতে আসছে।” তার এই পোস্ট দেশের সার্বভৌমত্ব নিয়ে চলমান উদ্বেগকে আরও উস্কে দেয়।

ভূ-রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের আশঙ্কা

বিশ্লেষকরা বলছেন, মিয়ানমারে চীনের প্রভাব মোকাবিলায় বঙ্গোপসাগর অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র কৌশলগত অবস্থান নিতে মরিয়া। সেন্ট মার্টিন, চট্টগ্রাম বন্দর ও রোহিঙ্গা ইস্যুকে কেন্দ্র করে মার্কিন তৎপরতা নতুন নয়। এখন কক্সবাজারকে ঘিরে এই активность সেই বৃহত্তর পরিকল্পনারই অংশ বলে মনে করছেন অনেকে।

এমনকি বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের অংশবিশেষ নিয়ে একটি “খ্রিস্টান রাজ্য” গঠনের ষড়যন্ত্রের আশঙ্কাও সামনে আসছে, যা নিয়ে পূর্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও সতর্ক করেছিলেন। একাধিক সূত্র ও বিশ্লেষকের মতে, এই পরিকল্পনায় নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ‘প্রক্সি নেতা’ হিসেবে ব্যবহার করা হতে পারে।

উল্লেখ্য, পিটার হাস বর্তমানে ‘এক্সিলারেট এনার্জি’র স্ট্র্যাটেজিক অ্যাডভাইজর হিসেবে কর্মরত। গত ৫ আগস্ট জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তির দিনে কক্সবাজারে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাদের সঙ্গে তার একটি ‘গোপন বৈঠক’ নিয়েও গুঞ্জন উঠেছিল।

সার্বিকভাবে, উন্নয়ন বা কূটনৈতিক সফরের আড়ালে দেশের ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হওয়ার আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন নাগরিক সমাজ। বিশ্লেষকদের মতে, দেশের অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় একটি গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করা অপরিহার্য।

Share.
Leave A Reply

Translate »
Exit mobile version