– শেখ হাসিনা ফ্যাক্টর
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সাফল্যের গোপন রহস্য ছিল স্থিতিশীল আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি, যা অর্থনৈতিক
প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। রাজধানী ঢাকা ছিল বিনিয়োগকারীদের কেন্দ্রবিন্দু এবং
সরকারের কার্যক্রমের মূল কেন্দ্র।
এই সাফল্যের পেছনে যে মানুষটি নেপথ্যের কারিগর ছিলেন এবং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন, তিনি হলেন
সুপরিচিত পুলিশ কমিশনার মি. হাবিবুর রহমান। তিনি ছিলেন সমগ্র বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর জন্য এক রোল
মডেল। তাঁর নেতৃত্বে একটি নিরাপদ কর্মপরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল, যা ব্যবসায়ীদের আস্থা জুগিয়েছিল, ফলে
ব্যবসা-বাণিজ্যের ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি সম্ভব হয়েছিল। পাশাপাশি তিনি সারা দেশে অসংখ্য সামাজিক ও
দাতব্য কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিলেন, যা তাঁকে এক অসাধারণ পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে আলাদা পরিচিতি
দিয়েছে।
শেখ হাসিনা সরকারের অর্থনৈতিক অর্জন
শেখ হাসিনা সরকারের অর্থনৈতিক সাফল্য নিয়ে কেউ দ্বিমত পোষণ করেন না। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক
(ADB) সম্প্রতি আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর দীর্ঘ তালিকায় যুক্ত হয়েছে যারা বাংলাদেশের এই
সাফল্যের স্বীকৃতি দিয়েছে। ADB বাংলাদেশকে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দ্রুততম প্রবৃদ্ধির
অর্থনীতি হিসেবে র্যাংক করেছে, যেখানে চীন, ভিয়েতনাম এবং ভারতকে ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ।
একই সময়ে, আমাদের বহু সামাজিক-অর্থনৈতিক সূচকে অগ্রগতি আমাদের প্রতিবেশীদের হিংসার কারণ
হয়ে দাঁড়িয়েছে। শক্তিশালী উৎপাদন খাত এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নের অভূতপূর্ব বিস্ফোরণে উদ্বুদ্ধ
হয়ে বাংলাদেশ ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্য স্থির করেছে—যা
স্বাধীনতার প্ল্যাটিনাম জয়ন্তীর সঙ্গে মিলে যাবে।
শেখ হাসিনা স্বাস্থ্য, ব্যাংকিং, উচ্চশিক্ষা, টেলিভিশন এমনকি রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা ও
অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ বহু খাতকে বেসরকারি খাতের জন্য উন্মুক্ত করেছেন—যেগুলো আগে
একচেটিয়াভাবে সরকারি খাতের আওতায় ছিল। তাঁর উন্নয়ন দর্শন মূলত পুঁজিবাদী ও সমাজতান্ত্রিক
গুণাবলীর এক অনন্য মিশ্রণ।
রাজনৈতিক অস্থিরতা ও নাগরিক অশান্তি
২০২৪ সালের আগস্টে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অপসারণ করা হয় ব্যাপক অপরাধমূলক
বিক্ষোভ ও সহিংস ঘটনার পর, যার মধ্যে পুলিশ স্টেশনে হামলা ও গুরুত্বপূর্ণ সরকারি অবকাঠামো
ধ্বংসের মতো ঘটনা অন্তর্ভুক্ত ছিল। এর পরই নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়।
এই রাজনৈতিক উত্থান-পতন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ব্যাহত করেছে এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা নষ্ট
করেছে। অস্থিরতার ফলে অর্থনৈতিক ক্ষতিও বিপুল হয়েছে। অনুমান অনুযায়ী, অবরোধ চলাকালীন
প্রতিদিন প্রায় ৬৫ বিলিয়ন টাকা (৫৮৮ মিলিয়ন ডলার) অর্থনীতি হারিয়েছে।
অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ
কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়—ড. ইউনূসের নেতৃত্বে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো যখন দেশ দখল করেছে, তখন
বাংলাদেশের অর্থনীতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে? শেখ হাসিনার ১৫ বছরেরও বেশি কঠোর পরিশ্রম কি সব
বিফলে যাবে? এই প্রশ্নগুলো আজ কোটি কোটি বাংলাদেশির মনে ঘুরপাক খাচ্ছে।
বাংলাদেশ বর্তমানে জটিল এক পরিস্থিতি অতিক্রম করছে, যেখানে অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ এবং
নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগ একই সঙ্গে বিদ্যমান। অর্থনীতিকে ঘিরে রয়েছে নানা প্রতিবন্ধকতা। দেশের
রাস্তাঘাটে কেউ আর নিরাপদ বোধ করে না—অপহরণ, ডাকাতি, গ্যাং ভায়োলেন্স প্রতিদিনের বাস্তবতা
হয়ে দাঁড়িয়েছে। শেখ হাসিনার প্রশাসনের পতনের পর থেকে কোটি কোটি মানুষ ভয়ের মধ্যেই বেঁচে আছে।
✍️ প্রকাশিত: ইঞ্জিনিয়ার শফিক ইসলাম (রাজনৈতিক বিশ্লেষক)