এএফসি এশিয়ান কাপের বাছাই পর্বের বহুপ্রতীক্ষিত ম্যাচে ভারত ও বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত গোলশূন্য ড্র করল। বাংলাদেশের হয়ে এটি ছিল প্রিমিয়ার লীগ তারকা হামজা চৌধুরীর অভিষেক ম্যাচ, কিন্তু শেষ পর্যন্ত দলকে জেতাতে পারলেন না তিনিও।
মেঘালয়ের রাজধানী শিলংয়ের জহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত এই ম্যাচে দুটি দলই একাধিক গোল করার সুযোগ বা ‘হাফ চান্স’ পেয়েছিল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত ভারত বা বাংলাদেশ কেউই গোলের মুখ দেখতে পায়নি।
প্রথমার্ধে বাংলাদেশ বেশি সুযোগ তৈরি করলেও দ্বিতীয়ার্ধে আবার তুলনামূলকভাবে ভারতের দাপট ছিল বেশি।
অভিষেক ভেঙে আন্তর্জাতিক ফুটবলে সদ্য ফিরে আসা ভারতের সুনীল ছেত্রী নিজেও গোলের সুযোগ ফসকেছেন।
ভারতের স্প্যানিশ কোচ মানোলো মার্কোয়েজ যে দলের পারফরমেন্সে ‘ক্রদ্ধ ও হতাশ’ – সে কথা তিনি ম্যাচের শেষে কোনও রাখঢাক না করেই জানিয়েছেন।
এই ম্যাচ থেকে ভারতের ‘পজিটিভ’ কী, সে প্রশ্নের জবাবে মার্কোয়েজ বলেন, “একমাত্র পজিটিভ হল আমরা সৌভাগ্যবান ছিলাম, যে বাংলাদেশ তাদের চান্সগুলো থেকে গোল করতে পারেনি!”
অন্য দিকে বাংলাদেশ কোচ হাবিয়ার কাবরেরাও স্বীকার করেন, চান্সগুলো ‘কনভার্ট’ করতে না-পারার ব্যর্থতাই তাদের ভুগিয়েছে।
তবে ভারতের বিরুদ্ধে ‘আশাব্যঞ্জক’ পারফরম্যান্স গ্রুপে সিঙ্গাপুর ও হংকং-এর বিরুদ্ধে অন্য ম্যাচগুলোতে তাদের উৎসাহ জোগাবে বলেও দাবি করেন কাবরেরা।
গ্রুপে কে কোথায় দাঁড়িয়ে?
প্রসঙ্গত, এই গ্রুপে এদিন সিঙ্গাপুর বনাম হংকং-এর অন্য ম্যাচটিও গোলশূন্য ড্র হয়েছে, ফলে গ্রুপের চারটি টিমের পয়েন্টই এখন সমান।
গ্রুপ থেকে একটিমাত্র দলই চূড়ান্ত পর্বে যেতে পারবে, ফলে এদিনের ম্যাচটা ভারত ও বাংলাদেশ দুই দলই প্রবলভাবে জিততে চেয়েছিল। কিন্তু গোলের মুখ খোলার ব্যর্থতায় শেষ পর্যন্ত তিন পয়েন্ট তুলতে পারল না কোনও দলই।
বাংলাদেশের নিয়মিত অধিনায়ক জামাল ভুঁইঞাকে এদিন প্রথম একাদশে রাখা হয়নি।
তার জায়গায় দলের ক্যাপ্টেন হিসেবে মাঠে নামেন তপু বর্মন। কিন্তু ২১ মিনিটের মাথাতেই আঘাত পেয়ে বেরিয়ে যেতে হয় তাকে, তার জায়গায় মাঠে নামেন রহমত মিঁয়া।
প্রায় সতেরো হাজার দর্শক এদিনের ম্যাচ দেখার জন্য মাঠে উপস্থিত ছিলেন, যে স্টেডিয়ামটি ‘পোলো গ্রাউন্ড’ নামেই বেশি পরিচিত।
হামজা চৌধুরী বনাম সুনীল ছেত্রী
পাহাড়ি শহর শিলং-য়ে এদিনের ম্যাচটিকে অনেকেই হামজা চৌধুরী বনাম সুনীল ছেত্রীর ব্যক্তিগত দ্বৈরথ হিসেবে দেখছিলেন – আর ম্যাচটিকে ঘিরে প্রবল আকর্ষণের পেছনে সেটাও ছিল একটা বড় কারণ।
ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগের তারকা, ২৭ বছর বয়সী হামজা চৌধুরী লেস্টার সিটির হয়ে এযাবত মোট ৫৭টি ম্যাচ খেলেছেন। গত জানুয়ারিতে তিনি ‘লোনে’ শেফিল্ড ইউনাইটেডে যান।
হামজা চৌধুরীর মাপের আন্তর্জাতিক তারকা এর আগে দক্ষিণ এশিয়ার কোনও জাতীয় দলের হয়েই কখনও খেলেননি, যে কারণে দলে তার যোগদানের পর বাংলাদেশ দলকে ঘিরে সমর্থকদের প্রত্যাশা্ও ছিল তুঙ্গে।
অন্য দিকে ভারতের হয়ে সর্বকালের সেরা গোলদাতা সুনীল ছেত্রী এই ম্যাচের ঠিক আগেই অবসর ভেঙে আবার জাতীয় দলের হয়ে খেলাতে ফিরে আসেন।
চল্লিশ পেরোনো সুনীল গত সপ্তাহেই এই মাঠে মালদ্বীপের বিরুদ্ধে প্রীতি ম্যাচে নিজে গোল করেছেন, সেই কামব্যাক ম্যাচে ভারতকে ৩-০ ব্যবধানে জেতানোতেও বড় ভূমিকা রেখেছিলেন তিনি।
এদিনের ম্যাচে ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার পোজিশনে খেলা হামজাকে বারে বারেই সেন্টার ফরোয়ার্ড সুনীল ছেত্রীকে ‘মার্ক’ করতে দেখা গেছে। দু’জনের টক্কর দর্শকরা উপভোগও করেছেন পুরো মাত্রায়।
ভারত-বাংলাদেশ ‘হেড টু হেড’
আজকের আগে পর্যন্ত ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে আন্তর্জাতিক ফুটবল ম্যাচ হয়েছে মোট ২৮টি। এর মধ্যে ভারত জিতেছিল ১৪টিতে, এবং দেশের মাটিতে তারা কখনও বাংলাদেশের বিরুদ্ধে হারেনি।
বাংলাদেশ দল ভারতের বিরুদ্ধে জিতেছিল মোট ৪বার, যার শেষটি ২২ বছর আগে। সেবার সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের সেমিফাইনালে বাংলাদেশ ২-১ গোলে ভারতকে হারিয়েছিল।